আল্লাহ তা’আলার যিকিরের ফজিলত

পবিত্র কোরআনের তাগিদ “হে ঈমানদার গণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর”(সুরা আহযাব – ৪১) তারাই জ্ঞানী ব্যক্তি যারা দাড়ানো বসা এবং শোয়া অবস্থায় তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে (সুরা আল ইমরান – ১৯১)। “অতঃপর তোমরা যখন নামায সম্পন্ন কর তখন দন্ডায়ামান, উপবিষ্ঠ ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর” (সুরা নিসা ১৪২)। “তুমি স্বীয় অন্তকরণে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর বিনয়ের সাথে এবং ভয়ের সাথে আরও স্মরণ কর প্রত্যুসে ও সন্ধ্যায় উচ্চ স্বরে ব্যতিরেকে নিম্ম স্বরে। আর গাফেলদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না” (সুরা আরাফু- ২০৫)। “আল্লাহর স্মরণই (জিকির) সবচেয়ে বড়” (সুরা আনকাবুত – ৪৫)। “আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণকারী এবং স্মরণ কারীনি, আল্লাহ তাদের জন্য মাগফেরাত ও প্রতিদানের ব্যবস্থা রেখেছেন” (সুরা আহযাব- ৩৫)। “সকাল সন্ধ্যা তোমরা রবের স্মারণ কর” (সুরা দাহার -২৫)। হযরত মুসা (আঃ) এর উদ্দেশ্যে আল্লাহপাক বলেছেন “(হে মুসা) তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলী সহ যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না।” (সুরা তোয়াহা -৪২)। হযরত মুসা (আঃ) ও আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে একবার বলেছেন – “তাকে (আমার ভাইকে) আমার কাজে অংশীদার করুন। যাতে আমরা বেশী করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করতে পারি এবং বেশী পরিমানে আপনাকে স্মরণ করতে পারি” (সুরা তোয়াহা ৩২-৩৪)। জিকির বা আল্লাহর স্মরণ হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে অল্প আমলে অধিক সওয়াব পাওয়ার মাধ্যম। অপরদিকে জিকির হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের দেহ। পবিত্র কালাম পাকে এরশাদ হচ্ছে “তোমরা আমার স্মরণের উদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম কর”।”

জিকির শব্দের অর্থ আল্লাহর স্মরন। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে যে কাজের দ্বারা সওয়াব হয় তাহাই জিকির। কারণ প্রতিটি সওয়াবের মুহুর্তেই আল্লাহর স্বরন হয়। মোট কথা আসল জিকির হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে আল্লাহকে আমদের ক্বলব বা মনের মধ্যে স্মরণের মাধ্যমেই আমাদের ক্বলব বা মন পরিস্কার বা সুস্থ করা সম্ভব। হাদিস শরীফ থেকে জানা যায় সবচেয়ে উত্তম জিকির গুলো হচ্ছেঃ

১/ আল্লাহ,২/ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ,৩/ সোবাহানাল্লাহি ও বি হামদিহি সুবহানাল্লহিল আজিম,৪/ সোবাহানআল্লাহ, ৫/আলহামদুলিল্লাহ ৬।আল্লাহু আকবার।

জিকির শব্দের অর্থ যেহেতু স্মরণ করা, উচ্চারণ করা নয় তাই আল্লাহর জিকির ঠিকভাবে করতে হলে উপরোক্ত যে কোন একটি বাক্যের দ্বারা মনে মনে উচ্চারণ করতে হবে।
হযরত আব্দুল কাদের জিলানি (রঃ) এর মতে “মুমিনের এক মুহুর্তের জন্য আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরুপ হওয়া বেআদবীর শামিল।”

রসুল পাক (সঃ) কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে কোন বান্দা সবচেয়ে শ্রেষ্ট ও উচু মর্যাদার আধিকারী হবে ? জবাবে রসুলে পাক বললেন আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণকারী নারী ও পুরুষ গন। তখন আবার প্রশ্ন করা হলো আল্লাহর রাস্তায় জেহাদকারী অপেক্ষাও কি? জবাবে রসুল পাক (সঃ) বললেন হ্যা সে যদি তার তরবারী দ্বারা কাফের ও মুশরেকদেরকে এমন ভাবে কাটে যে , তার তরবারী ভেঙ্গে যায় আর সে নিজে রক্তে রক্তাক্ত হয়ে যায়। তবওু তার চেয়ে আল্লাহর যিকিরকারী মর্যাদার দিক দিয়ে অনেক শ্রেষ্ঠ। (আহমদ, তিরমিজি, বাইহাকী,মিশকত)।

রসুল পাক (সঃ) বলছেন :আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি দ্বাতা আল্লাহর যিকিরের চেয়ে আর কোন জিনিস নাই। (বইহাকী, মিশকাত) রসুল পাক (সঃ) বলেছেন আমি কি তমাদিগকে এমন একটা আমলের কথা বলবোনা যা সকল আমল অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, তোমাদের মর্যাদাকে সবচেয়ে উচুকারী, সণ্বর্ ও রুপাদান করার চাইতেও শ্রেষ্ঠ এবং জিহাদে শত্রুদের সম্মুখীন হওয়া যে,তোমরা তাদেরকে মারবে আর তারা তোমাদের মারবে এভাবে জেহাদ করার চাইতেও উত্তম? তখন সাহাবা (সঃ) গন উত্তরে বললেন হ্যা অবশ্যই বলুন। তখন রাসুল (সঃ) বললেন : তা হলো আল্লাহর জিকির (আহমদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, ইবনে আবিদ, দুনিয়া, হাকেম, বাইহাকী, জামে সগীর, মিশকাত শরীফ।)

হযরত মায়াজ ইবনে আনাস (সঃ) থেকে বর্ণিত আছে জনৈক ব্যক্তি রসুল পাক (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন মুজাহিদ গণের মাঝে সর্বাধিক প্রতিদান ও সওয়াবের অধিকারী কোন ব্যক্তি হবে? রসুল পাক (সঃ) বললেন : যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহকে ম্মরণ করে অথার্ৎ জিকির করে। অতপর জ্ঞাসা করা হলো রোজাদার গণের মধ্যে সর্বোচ্চ সওয়াবের অধিকারী কে হবে?তিনি (সঃ) বললেন যে রোজাদার আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বেশী করবে। এরুপ ভাবে নামাজ, যাকাত, হজ্ব ,সদকা প্রভৃতি সম্পর্কেও জিঙ্গাসা করলো। তিনি প্রতিবার একই উত্তর দিলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির সবচেয়ে বেশী করবে সেই সর্বোচ্চ প্রতিদান লাভ করবে।যাবতীয় ইবাদত সমুহের মধ্যে জিকির বা আল্লাহর স্মরনই একমাএ একটি এবাদৎ যা কমকষ্টে সহজ পব্দতিতে করা যায় এবং অল্প আমলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়। অজু অবস্থায়, অজু ছাড়া,বসা,দাড়ানো এবং শোয়া অবস্থায় এই এবাদৎ করতে কোন বাধা নেই।

পবিত্র কোরঅনে সুরা বাকারায় আল্লাহ পাক বলেন – তোমরা আমাকে স্বরন করো আমিও তোমাদেরকে স্বরন করবো -১৫২”। বান্দা যদি আল্লাহকে স্বরন করে তবে আল্লাহও বান্দাকে স্বরন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।হযরত সাবেত বুনানী (রাঃ) বলেন , আল্লাহ পাক কখন আমাকে স্বরন করেন তা আমি জানি।লোকেরা আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি যখন আল্লাহকে স্মরন করি ঠিক তখনই তিনি আমাকে স্মরন করেন।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন ,আল্লাহপাক জিকির ব্যতিত কোন ফরজই আরোপ করেননি যার পরিসীমা বা পরিধি নির্ধারিত নেই, নামাজ দিনে পাঁচবার রমজানের রোজা নিদৃষ্ট সময়ের জন্যে, যাকাতও বৎসরে একবার দিলেই হয় কিন্তুআল্লাহর জিকির বা স্ম্বরন এমন একটা এবাদত যার কোন সীমা সংখ্যা নির্ধারিত নেই, বিশেষ কোন সময়কালও নির্ধারিত নেই অথবা এর জন্য নো, বসা বা শায়িত অবস্থায় থাকারও কোন কথা নেই। এমন কি অজু ও পবিত্র অবস্থায় থাকারও কোন শর্ত নেই। সফরে থাকুক বা বাড়িতে থাকুক, সুস্থ থাকুক বা অসুস্হ্থ থাকুক, জলভাগ কিংবা স্থলভাগ, রাত হোক বা দিন সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণের হুকুম রয়েছে। এজন্য জিকির বা আল্লাহর স্মরণ বর্জনকারীর কোন কৈফিয়ত গ্রহন যোগ্য হবে না। যদি না সে অনুভূতি বিহিন ও বেহুশ হয়ে পড়ে।

হযরত মুয়াজ ইবণে যাবাল (রঃ) বলেন , বেহেশতীরা বেহেস্তে অবস্থান কালে কোন বিষয়ই আফসোস করবেনা, শুধুমাত্র পৃথিবীতে অবস্থান কালে যে সময়টুকু আল্লাহর জিকির করে নাই সে সময় টুকুর জন্যই আফসোস করবে।রসুলপাক (সঃ) বলেন, যে ব্যক্তি জান্নাতের বাগিচায় পায়চারী করতে চায় , সে যেন অধিক পরিমানে আলা্লহর স্মরণ করে। হাদিসে কুদসিতে আছে , “আল্লাহপাক বলেন , যদি আমার বান্দা আমাকে অন্তরে স্মরণ করে , আমিও তাকে স্মরণ করি। অনুরুপ ভাবে বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘৎ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই।বান্দা যদি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় আমি তার উভয় বাহু বিস্তৃত পরিমান তার দিকে অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে হেটে অগ্রসর হয় , আমি তার দিকে দৌড়িয়ে যাই”।হযরত আবু হুরাইরা (রঃ) বলেন দুনিয়ার যে ঘর গুলোতে আল্লাহর জিকির হতে থাকে সে ঘর গুলো উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় চমকাতে থাকে।ফেরেস্তারা আসমান থেকে তা অবলোকন করতে থাকেন।রসুল পাক (সঃ) ইরশাদ করেন কোন মানব দল কোথাও বসে আল্লাহর জিকির করলে ফেরেস্তারা তাদের ঘিরে নেয় এবং তাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।

অধিকন্তু আল্লাহ তায়ালা তার ফেরেস্তাদের নিকটে তাদের স্মরণ করেন। অযুতে বা বিনা অযুতে উঠতে বসতে চলতে ফিরতে সব সময় আল্লাহর জিকির করা যায়। এর জন্য মানুষের কোন পরিশ্রমই করা লাগেনা। কোন অবসরের প্রয়োজন হয়না। কিন্তু এর সুফল এবং ফলশ্রুতি এত ব্যাপক যে আল্লহর স্মরণের মাধ্যমে পার্থিব কাজ কমর্ও ইবাদতে রুপান্তরিত হয়। আহার গ্রহণের পূর্ববর্তী দোয়া , বাড়িতে ঢোকার ও বাড়ি থেকে বের হওয়ার দোয়া , কোন কাজের সূচনা ও পরিসমাপ্তির দোয়া প্রভৃতি দোয়ার তাৎপর্য্য ও সারমর্ম এই যে মোসলমান যেন কোন সময়ে আল্লাহর স্মরণে অমনোযোগী ও গাফেল হয়ে কোন কাজ না করে। কোন বিশেষ সময়েই নয় বরং সর্বক্ষন আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট এবং তার কন্ঠ আল্লাহর স্মরণে সিক্ত থাকলেই এর মাধ্যমে ইবাদত এবং অন্যান্য দ্বীনি কাজের প্রান প্রতিষ্ঠা হয়। মানুষের মধ্যে যখন এই অবস্থার সৃষ্টি হয় তখন তার জীবনের ইবাদৎ এবং দ্বীনি কাজ ঠিক তেমনিভাবে বিকাশে লাভ করে যেমন একটি চারা গাছকে তার প্রকৃতির অনুকুল পরিবেশ ও আবহাওয়ায় রোপন করা হয়।

পক্ষান্তরে যে জীবন আল্লহর স্মরণে শূন্য থাকে ,সেখানে বিশেষ সময়ে এবং বিশেষ সুযোগ অনুষ্ঠিত ইবাদত এমন একটি চারা গাছের ন্যায় যাকে তার প্রকৃতির নিছক বাগানের মালিকের বিশেষ তত্ত্বাবাধানে বেঁচে থাকে। একজন প্রকৃত মুসলমান কখনই আল্লাহর স্মরণবিহীন থাকতে পারে না। প্রাত্যাহিক ঘুমাতে যাওয়ার সময়ের দোয়া ঘুম থেকে উঠে পড়ার দোয়া, অযু করার পূর্বের দোয়া , গোসলের দোয়া, দৈনন্দিন প্রতিটি কাজের শুরুতে দোয়া পড়া। এই ভাবে একজন মুমিন ঘুম থেকে জেগে আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহুতর্ পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশিত ও রাসুল পাক (সাঃ) এর প্রদর্শিত আমল সমূহ পর্যালোচনা করলে দিনে রাতে ২৪ ঘন্টাই আল্লাহর জিকির অথার্ৎ স্মরণ করতে পারে। বাস্তবে কোন অবৈধ পথ অবলম্বন করতে গেলেই আল্লহর স্মরণ হবে এবং অন্যায় ও অবৈধ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে।
সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে আমাদের ক্বলব বা মন পরিষ্কার ও সুস্থ হয়ে যায় । পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন, ” একমাত্র আল্লাহর যিকিরেই (মানুষের) ক্বলব(মন) প্রশান্তি লাভ করে।”

পবিত্র হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে “জেনে রেখ, মানুষের দেহের মধ্যে এক খন্ড মাংশ পিন্ড আছে, যখন তাহা সংশোধিত হয়, তখন সমগ্র দেহ সংশোধিত হয়ে যায়। আর যখন তা দুষিত হয় তখন সমগ্র দেহটাইত দুষিত হয়ে যায়। মনে রেখ ওটাই ক্বলব”( বোখারী ও মুসলিম শরীফ)। অন্য এক হাদিসে পাওয়া যায় মানুষ যখন কোন পাপ কাজ করে তখন তার ক্বলবের মধ্যে কালি পড়ে যায়। আমরা রাসুল পাক (সাঃ) এর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই বাল্য কালে উনার দুবার বুক খুলে সীনা পরিস্কার করা হয়েছে। অন্য হাদিসে পাওয়া যায় শয়তান প্রতিটি মানুষের ক্বলবের মধ্যে হাটু গেড়ে বসে থাকে। যখন সে জিকির শুরু করে তখন সে পালিয়ে যায়। আবার যখন আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল হয় তখন শয়তান আবার ক্বলবে ফিরে এসে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রনা) দিতে থাকে।
ক্বলব শব্দের অর্থ অন্তর বা মন।এটি একটি মাংশের টুকরা।এর আকৃতি মসুর ডালের মত।বুদ্ধিকেন্দ্র ও জ্ঞান কেন্দ্র বুঝাতেও কখনও কখনও ক্বলব শব্দটি ব্যবহ্রত হয়।এর স্থান মানুষের বাম স্তনের ১ (এক) ইঞ্চি নীচে। অনেকে ক্বলব কে হৃদপিন্ড মনে করেন। আসলে এটা হৃদপিন্ড বা মস্তিস্ক নয় অন্য জিনিস। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরাও মনে করেন অন্তর বা মন হচ্ছে মানুষের বাম স্তনের নীচে। পবিত্র কোরআনে ক্বলবের অবস্থান সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, “বস্তুত চক্ষুতো অন্ধ হয় না কিন্তু ঐ ক্বলব অন্ধ হয় যে ক্বলব হলো বুকের মধ্যে”। (সুরা হজ্ব ৪৬)

রাসুল (সাঃ) ফরমান “নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের শরীর বা আকৃতির দিকে তাকান না , বরং তিনি তোমাদের ক্বলবের (মন বা অন্তর) দিকেই তাকান”। অতপর রাসুল (সাঃ) ক্বলবকে দেখানোর জন্য স্বীয় আঙ্গুল দ্বারা নিজের বুকের দিকে ইশারা করলেন (মুসলিম শরীফ) । রসুল পাক(সাঃ) আরো বলেন,”মানুষের ক্বলব আল্লাহ পাকের অতুলনীয় ও আলৌকিক দুই আঙ্গুলের মধ্যে। তিনি অন্তর সমুহকে(ক্বলব) যেমন ইছ্ছা তেমনি করে দেন” । আল্লাহর কাছে দোয়া করার সময় রসুল পাক(সাঃ) বলতেন,”হে অন্তরের(ক্বলব) আবর্তন ও বিবর্তনকারী আল্লাহ ।তুমি আমাদের ক্বলবকে তোমার আনুগত্যমুখী করে দাও।” ক্বলব সম্পর্কে রাসুল পাক (সাঃ) আরো বলেন “ক্বলব হলো সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গেঁর বাদশা” ( মেরকাত শরীফ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৬২) অর্থাৎ একটি দেশের বাদশাহ ভাল হলে দেশের প্রজারাও যেমন ভাল হতে বাধ্য হয়, তদপ্রু একটি মানুষের ক্বলব বা অন্তর ভাল হলে নিজের কাজ কমর্ও ভাল হয়ে যায়। অপর দিকে একটি মানুষের ক্বলব খারাপ হলে তার কর্মকান্ডও খারাপ হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে ” তাদের ক্বলব সমুহের উপর ছাপ পড়ে গেছে। ফলে তারা বুঝে না।” ( সুরা তওবা, আয়াত-৮৭) । পবিত্র কোরআনে অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, “আমি তাদের ক্বলব সমুহের উপর ছাপ মেরে দিয়েছি। ফলে তারা শুনতে পায় না”(সুরা আ’রাফ-১০০)।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে ক্বলব যতটুকু ভাল তার আমলও তত ভাল আর যার ক্বলব যত নষ্ট ,তার আমলও তত নষ্ট বা খারাপ। পবিত্র কোরআনে আরও এরশাদ হচ্ছে “যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে আল্লাহ তার ক্বলবকে হেদায়াত দান করবেন”। (সুরা আন কাবুত ৯১)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে যে রাসুল, তাদের জন্য দুঃখ করবেন না যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়।যারা মুখে বলে আমরা ঈমান এনেছি, অথচ তাদের ক্বলব ঈমান আনেনি। (সুরা মায়েদা-৪১) । অন্যত্র কালাম পাকে এরশাদ হচ্ছে “কখনো না , বরং তারা যা কিছু (গোনাহ) উপার্জন করে তাই তাদের ক্বলবের উপর মরিচা ধরিয়ে দিচ্ছে”( সুরা মুতাফিফীন-১৩)।

ক্বলবের মধ্যে এই মরিচা পড়তে পড়তে ক্বলব কাল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তখন আর ভাল মন্দের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।রাসুল পাক (সাঃ) ফরমান “তখন ভালকে ভাল জানার এবং মন্দকে মন্দ জানার ক্ষমতা রাখেনা” ( মুসলিম শরীফ-১ম খন্ড, ৮২ পৃঃ) ।

তওবা ও এস্তে-গফার করে নেয় তাহলে তার ক্বলব ছাফ হয়ে যায় আর যদি গুনাহ বাড়তে থাকে তাহলে দাগও বাড়তে থাকে ও অবশেষে এটা ক্বলবকে ঘিরে ফেলে” (তিরমিজি শরীফ)। সুতরাং কলব থেকে ময়লা পরিষ্কার করতে হলে কলব সংশোধন করা আবশ্যক। কলব সংশোধন হয়ে গেলে গুনাহ করতে মন চাইবে না। গুনাহর প্রতি ঘৃনা সৃষ্টি হবে। গুনাহ করতে খারাপ লাগবে ও কষ্ট বোধ হবে । অপর দিকে ইসলামের দিকে চলতে মনে ভাল লাগবে ও উৎসাহ বোধ হবে।

ক্বলবের পরিচ্ছনতা বা সুস্থতাকে এরকম ভাবে বোঝানো যেতে পারে। যখন কোন ব্যক্তির জ্বর হয়, তখন তার অবস্থা হয় একজন সুস্থলোকের সম্পুর্ন বিপরীত। অর্থ্যাৎ অসুস্থ্য ব্যাক্তির ঠান্ডা লাগে, ভাল এবং সুস্বাদু খাবার ভাল লাগে না বা তিক্ত লাগে। তদ্রুপ একজন লোকের ক্বলব বা মন যদি অসুস্হ বা ময়লা হয়ে যায়। তখন তারও আল্লাহর আদেশ নিষেধ ভাল লাগে না। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যে সব কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন সে সকল কাজ করতে মন চায় না। অপর দিকে যে সকল কাজ আল্লাহপাক করতে নিষেধ করেছেন, সে সকল কাজকে খুবই ভাল লাগে। অর্থাৎ একজন ময়লা বা অসুস্হ ক্বলব যুক্ত ব্যাক্তির নামাজ, রোজা, হ্জ্জ, যাকাত, দোয়া, সত্য কথা, বলা ইত্তাদি এসকল কাজ ভাল লাগেনা । অপর দিকে মিথ্যা কথা বলা, ঘুষ খাওয়া, অস্লীলতা, হিংসা ,অহংকার এসকল কাজ খূবই ভাল লাগে বা আনন্দ পায়। অপর দিকে একজন ব্যাক্তির ক্বলব বা অন্তর পরিস্কার বা সুস্হ হলে আল্লাহর আদেশ মানতে অর্থ্যাৎ নামাজ, রোজা, হ্জ্জ, যাকাত ইত্যাদি এবাদতে আনন্দ লাগে। অপর দিকে আল্লাহর নিষেধ কৃত কাজের প্রতি ঘৃনার সৃষ্টি হয় এবং ঐ সকল কাজ করতে মন চায় না।

বিষয়টাকে কোন কোন বুজুর্গব্যক্তি দুধ ও মাখনের সাথে তুলনা করেছেন। যেমন সাধারন দুধ কে যে কোন তরল পদার্থের সাথে রাখলে মিশে যায়। কিন্তু দুধ কে যদি ভাল ভাবে জ্বাল দিয়ে তা থেকে মাখন বের করা হয় তবে এই মাখন কোন তরল পদার্থের সাথে মিশে যায় না। সে তার স্বকীয়তা বজায় রাখবে ।তদ্রুপ একজন মুসলমান যদি সৎ কাজ, আল্লাহর এবাদৎ বন্দেগি ও সর্বাবস্হায় আল্লাহর যিকির বা স্মরনের মাধ্যমে একজন পরিস্কার বা সু্স্হ ক্বলব যুক্ত মুমিন হতে পারে, তবে সে যত প্রতিকুল অবস্থায়ই থাকুন না কেন, সর্বাবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চ্ষ্টো করবে অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ ঠিকভাবে মেনে চলবে এবং গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিবে না। অথবা বষয়টিকে শরীর চর্চার সাথেও তুলনা করা যেতে পারে।একজন সাধারন ব্যক্তিও যদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতে ব্যয়াম করতে থাকে ,তাহলে দখা যাবে যে কয়েক বৎসরের মধ্যেই সে একজন সাধারন ব্যক্তির তুলনায় অনেক বেশী শক্তিসালী হয়ে গড়ে উঠেছে।

তদ্রুপ একজন সাধারন মুসলমানও যদি অন্যান্য এবাদতের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন সর্বাবস্হায় আল্লাহতাআলার যিকির করতে থাকে তাহলে সেও একজন সাধারন মোসললমানের তুলনায় অনেক বেশী ইমানদার হবে।যানাকি তার চেহারা ও আচার আচরনেও প্রকাশ পাবে । এখন কথা হচ্ছে আমাদের ক্বলব কিভাবে ময়লা ও অসুস্হ হয় এবং কি ভাবে এই ক্বলবকে পরিস্কার ও সুস্থ্য করা যায় এবং প্রকৃত ঈমানদার ও মুসলমান হওয়া যায়। এতক্ষনের আলোচনায় একথা প্রমানিত হলো যে আমদেরর ক্বলব বা মনে জং ধরতে পারে বা ময়লা হতে পারে বা অসুস্হ হতে পারে, আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ না মেনে চললে এবং অ-ইসলামিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে একবার মানুষের মন অসুস্হ ও কলুষিত হলে তখন তার আল্লাহর আদেশ নিষেধের ব্যাপারে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তখন সে তার নফসের খায়েস বা মনের আকাংখা পূরনের জন্যই সব কাজ করে থাকে। সৃষ্টি কর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ বা বেহেস্তের আনন্দ ও দোযখের শাস্থির কথা মনে থাকে না বা বিশ্বাস করে না। তার সামনে যতই হাদিস বা কোরআনের আয়াত বা কোরআনের কথা বলা হোক না কেন কোন কথাই তার মনে দাগ কাটে না। অর্ধাৎ ধর্মের কথা শুনতে তার খারাপ লাগে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই মনের অসুস্থতা ও জং বা ময়লা কিভাবে দুর করা যায় এবং এগুলো আমদের ক্বলব বা মন থেকে দুর করতে পারলে কি উপকার হবে। রাসুল পাক (সঃ) বলেন ”প্রতিটি বস্তু পরিস্কার করার জন্য একটি যন্ত্র বা রেত থাকে । তদ্রুপ মনের পরিচ্ছন্নতা আনার যন্ত্র হচ্ছে আল্লাহর জিকির বা স্বরণ”। রাসুল পাক (সঃ) বলেন “হে আল্লাহ আপনার জিকিরের দ্বারা আমাদের ক্বলবের তালা গুলো খুলে দিন।” রাসুল পাক (সাঃ) আরো বলেন “মানুষ যখন কোন খারাপ কাজ বা গুনাহ করে তখন তার ক্বলবের মধ্যে কালো দাগ পড়ে যায়”। রাসুল পাক (সঃ) আরে বলেন “নিশ্চয়ই ক্বলব সমুহে মরিচা পড়ে। যেমন ভাবে লোহার মধ্যে পানি লাগলে মরিচা পড়ে। তখন সাহাবায়ে কেরাম (রঃ) বললেন হে আল্লাহর রসুল (সাঃ) এটা পরিস্কার করার উপায় কি? জবাবে রাসুল পাক (সঃ) বললেন মৃত্যুকে খুব বেশী বেশী স্মরণ করা আর কোরান তেলওয়াত করা”।
আল্লাহ পাক তখন ইচ্ছা করলে এই ক্বলবের মধ্যেই এক জ্ঞান ন করেন। এই জ্ঞান কোন বই পত্র পড়ে বা শুনে অর্জন করা সম্ভব নয় । এই জন্য এই জ্ঞানকে ক্বলবী জ্ঞান বা আত্বিক জ্ঞান বলা হয় । এই জ্ঞানকে কোন কোন বুজর্গ ইলমে তাসাউফ , ইলমে আসরার বা ইলমে মারেফত প্রভৃতি নামে অভিহিত করে থাকেন।

হাদিস শরীফে আছে জ্ঞান দুই প্রকার । এক প্রকার জ্ঞান হচ্ছে জবানী জ্ঞান, অন্য একটি ক্বলবী এলেম বা আত্বিক জ্ঞান। রাসুল পাক (সাঃ)বলেন ক্বলবী এলেম বা আত্বিক জ্ঞানই হচ্ছে উপকারী জ্ঞান(মেশকাত শরীফ)।।হযরত আবু হোরায়রা(রাঃ) বলেছেন,”আমি রসুল পাক(সাঃ) এর কাছ থেকে জ্ঞানের দুটি পাত্র অর্জন করেছি।একটি তোমাদের মধ্যে বিতরন করেছি অন্যটি করিনি।যদি করতাম তবে আমার তবে আমার কন্ঠদেশ কর্তিত হতো ” (বোখারী শরীফ)।জবানী এলেম হচ্ছে সে সকল বাহ্যিক জ্ঞান যথা কোরআন ও হাদিস শরীফ পড়ে বা শুনে অর্জন করা যায়। কিন্তু ক্বলবী এলেম কোন কিছু পড়ে বা শুনে অর্জন করা সম্ভব নয় । এটা এমন একটা অদৃশ্য জ্ঞান যা শুধু মাএ আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে এবং একমাএ আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত একটি জ্ঞান।এই জ্ঞান অর্জন করতে হলে আমাদের ক্বলব পরিস্কার বা সুস্থ্য থাকা আবশ্যক এবং একমাএ আমাদের ক্বলবের মাধ্যমেই এই জ্ঞান অর্জন সম্ভব। তাই অনেকে এই জ্ঞানকে ক্বলবী জ্ঞান বা আত্বিক জ্ঞান বলে থাকেন। অনেকে ইহাকে ইলমে ছির বা বাতেনী জ্ঞানও বলে থাকেন। এই জ্ঞানকেই কোন কোন সুফী সাধক গন ইলমে তাসাউফ , ইলমে মারেফাত, ইলমে আসরার প্রভৃতি নামে অভিহিত করে থাকেন। পবিএ কালাম পাকে ইহাকে তাজকিয়া এবং হাদিস শরীফে ইহাকে এহসান নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

হুজুর পাক (সাঃ) এর বহুমুখি শিক্ষার মধ্যে এই তাজাকিয়াও ছিল একটি অন্যতম বিষয় ।কালামে পাকে এরশাদ হচ্ছে “তিনিই উম্মিদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরন করেছেন , যিনি তাদেরকে তাজকিয়া করেন এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেন। যদিও ইতিপূর্বে তারা গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল” (সুরা জুমায়া ২)।হাদিস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি এলেম অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ তাকে এমন বস্তুর জ্ঞান দান করেন যা সে ব্যক্তি কখনো জানে নাই বা পড়ে নাই।”এই হদিসের আলোকে বোধ হয় কোন মনীষি বলেছেন _ ”KNOWLEDGE COMES FROM GOD AND EDUCATION IS COLLECTION OF SOME INFORMATION.”অর্থাৎ জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত এবং কিছু সংখ্যক তথ্যের সমাহারকে শিক্ষা বলা হয়। অর্থাৎ বইপত্রের মাধ্যমে আমরা যে সকল লেখা পড়া শিখেছি তা হচ্ছে শুধুমাত্র কিছু তথ্যের সমাহার । তাই হাদিস শরীফ অনুযায়ী প্রথম প্রকার বাহ্যিক জ্ঞান কে আমরা তথ্য বা INFORMATION বলেতে পারি এবং দ্বিতীয় প্রকার ক্বলবী জ্ঞানকে আমরা ইংরেজীতে KNOWLEDGE বলতে পারি।

হযরত আবু হোরায়রা(রাঃ) বলেছেন,”আমি রসুল পাক(সাঃ) এর কাছ থেকে জ্ঞানের দুটি পাত্র অর্জন করেছি।একটি তোমাদের মধ্যে বিতরন করেছি অন্যটি করিনি।যদি করতাম তবে আমার তবে আমার কন্ঠদেশ কর্তিত হতো ” (বোখারী শরীফ)।ক্বলবী জ্ঞান বা আত্মিক জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত এমন একটি অদৃশ্য জ্ঞান যাহা এলমে শরীয়ত অনুযায়ী চরিত্র গঠন ও নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী লাভ করা যায় অর্থ্যৎ আল্লাহ প্রদত্ত এমন একটি অদৃশ্য জ্ঞান যাহার মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয়, ঈমান,শরীয়ত প্রতিপালনে হৃদয় রাজ্যে নফস ও শয়তানদের প্রভাব ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কোরআন ও হাদিস শরীফে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সে সকল বিষয় সমুহের তাৎপর্য অন্তদৃষ্টিতে অনুভূত হয় এবং হুজুর পাক (সাঃ) এর উপস্থাপিত দ্বীন প্রতিপালনে মহব্বত ও আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং শীরয়ত বিরোধী কার্যকলাপের প্রতি ঘৃনার সৃষ্টি হয়। হজরত ইমাম মলিক (রাঃ) বলেছেন ”যিনি তাসাউফ গ্রহন করলেন কিন্তু ফিকহ গ্রহন করলেন না তিনি নিশ্চই কাফের । আর যিনি ফিকহ গ্রহন করলেন কিন্তু তাসাউফ গ্রহন করলেন না, তিনি নিশ্চয়ই ফাসেক। আর যিনি উভয় জ্ঞান গ্রহন করলেন এবং সেই অনুযায়ী আমল করলেন তিনিই মুহাক্কেক বা প্রকৃত দ্বীন গ্রহণ করলেন।” এই জন্যই একজন বিধর্মি বা ধর্মে বিশ্বাস করেনা এমন ব্যক্তি কোরআন হাদিস বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি ধারী হলেও তাকে আলেম বা মুহাক্কেক বলা যাবে না। কারণ রসুল পাক (সঃ) বলেছেন , আলেমগনই নবী রাসুল গণের উত্তরাধিকারী। তিনি আরো বলেন ফেরেস্তাকুল আলেমদের মহব্বত করেন এমনকি নদীর মৎসকুলও তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করে। রসুল পাক (সঃ) বলেন “আমি আমার উম্মত অপেক্ষা যে রুপ শ্রেষ্ঠ আলেমগনও আবেদ গন অপেক্ষা সেই রুপ শ্রেষ্ঠ”। সুতারং একজন প্রকৃত আলেম বা মুহাক্কেক হতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে ইসলামের দুই প্রকার জ্ঞানই গ্রহন করতে হবে এবং সঠিক নিয়্যতে অথার্ৎ শুধু মাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই সঠিক ভাবে তা আমাদের প্রতিপালন করতে হবে। আমাদের মৃত্যুর পর কবরের ভিতর মুনকারনাকীর দুই ফেরেস্তা যে সকল প্রশ্ন করবেন তার জবাবও শুধুমাত্র এই ক্বলবী জ্ঞানের মাধ্যমেই দেওয়া সম্ভব। তার কারণ হচ্ছে ঐ সকল প্রশ্নের জবাব অনেক বিধর্মী ও নাস্তিকের মস্তিষ্কে মখুস্ত হয়ে আছে।কিন্তু তারা জবাব দিতে পারবে না। কারণ মস্তিষ্ক প্রসুত জ্ঞান বা বাহ্যিক জ্ঞান মানুষের মৃতু্র সংগে সংগেই শেষ হয়ে যাবে। শুধু মাত্র ক্বলবী জ্ঞানই অক্ষত থাকবে এবং ঐ জ্ঞানের মাধ্যমে মুমিনগন জবাব দিতে পারবেন। তাই ক্বলবী জ্ঞান অর্জন করার প্রথম শর্তই হচ্ছে তাকে মুমিন হতে হবে। কবির ভাষায় –
১। ”পুথিগত বিদ্যা ,পর হস্তে ধন ।
নহে বিদ্বা,নহে ধন,হলে প্রয়োজন।” অথবা
২।”যদি কাগজে লিখ নাম, কাগজ ছিড়ে যাবে,
যদি পাথরে লিখ নাম,সে নাম ক্ষয়ে যাবে।
হ্রদয়ে লিখ নাম,সে নাম রয়ে যাবে।”

কাজী সানাউল্লাহ পানি পথী (রঃ) বলেন সুফী বুজুর্গগন যে শাস্ত্রকে লাদুন্নী বলেন তা অর্জন করা ফরজে আইন। কেননা এই শাস্ত্রের ফল হচ্ছে গায়রুল্লাহর যিকির থেকে অন্তরের পরিচ্ছন্নতা, সার্বক্ষনিক উপস্থিতিতে অন্তরের মশগুল হওয়া, কুচরিত্র থেকে আতড়বশুদ্বি যেমন অহমিকা, অহংকার, হিংসা, সংসার প্রীতি, জাকজমক প্রীতি, এবাদতে অলস্যতা, অবৈধ কাম বাসনা, রিয়া, খ্যাতি ইত্যাদি, এর আরোফল হচ্ছে সচ্চরিত্রতার গুনে গুনান্বিত হওয়া, যেমন গোনাহ থেকে তওবা করা আল্লাহর ফয়সালায় সন্তষ্ট থাকা, নেয়ামতের শোকর গুজার করা বিপদ আপদে ছবর করা ইত্যাদি। এতে সন্দেহ নেই যে এসব বিষয় মুমিনের জন্য অংগ প্রতঙ্গের গোনাহ থেকেও অধিকতর কঠোর হারাম এবং নামায, রোজা, যাকাত অপেক্ষাও অধিক গুরুত্বপূর্ন ফরয। কারণ “যে কোন এবাদত খাঁটি হওয়ার নামই তাসাউফ”। ইমাম গাযযালী (রঃ) বলেন, “ক্বলবী জ্ঞান বা আত্বিক জ্ঞান অর্জন করা ফরজে আইন”। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রঃ) ও তাসাউফ বা ক্বলবী জ্ঞানকে ফরযে আইন সাব্যস্ত করেছেন। আল্লামা শামী (রঃ) বলেন, – “কুস্বভাব দূর করার জন্য ক্বলবী জ্ঞান এতটুকু অর্জন করবে যতটুকুর প্রয়োজন তুমি নিজের জন্য অনুভব করবে।”

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply