প্রত্যেক মানুষের কাঁধে কেরামন কাতেবীন নামক দুইজন করিয়া ফেরেশতা সদা-সর্বদা অবস্থান করেন। ইহারা মানুষের পাপ-পুণ্য লিপিবদ্ধ করেন। তা সে যত সাবধানে, যত গোনেই করুক না কেন, এবং কাজটি যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন তাহা বিন্দু মাত্রও কেরামন-কাতেবীনের লেখা হইতে বাদ পড়ে না । প্রতেক বৃহিস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে (জুম্মা রাত্রে) এই দৈনিক কার্য তালিকা একত্রিত করিয়া সাপ্তাহিক দলিল বা কার্য বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। যদি কোন লোক জুম্মা রাত্রে গত এক সাপ্তাহের কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হইয়া তওবা করে, তবে তাহার ঐ সপ্তাহের গোণাহ্গুলি কাটিয়া সাপ্তাহিক কার্যবিবরনীতে শুধু নেকি বা পূণ্য কর্মগুলিই লিখিয়া লওয়া হয় ।
প্রতি বৎসর সবে ক্বদরের রাত্রিতে প্রত্যেকের সাপ্তাহিক কার্যতালিকাগুলি একত্রিত করিয়া একখানা বার্ষিক তালিকা তৈরী করা হয় । যাহারা শবে ক্বদরের রাত্রিতে সারা রাত্রি জাগরিত থাকিয়া আল্লাহপাকের জিকির আজকার ও ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকেন এবং নিজের কৃত গোণাহের জন্য অণুতপ্ত হইয়া তওবা করেন, তাহাদের বার্ষিক কার্যতালিকা হইতে গোণাহ্গুলো কাটিয়া দিয়া শুধু নেকীগুলো লিপিবদ্ধ করিয়া একখানা দলিল প্রস্তুত করা হয় । প্রত্যেক মানুষের নামে প্রতি বৎসর একখানা কার্য তালিকা তৈরী হতে থাকে এবং তাহার মৃত্যুর পর সব গুলি কার্যতালিকা একত্রিত করিয়া একখানা পূর্ণ পাকা দলিল প্রস্তুত করা হয় । ইহারই নাম আমল নামা । কিয়ামতের দিন উক্ত আমলনামা প্রত্যেকের হাতে দেওয়া হইবে । যাহারা পূর্ণ্যবান ব্যক্তি তাহাদের আমলনামা সম্মুখের দিকে দিয়া ডান হাতে দেওয়া হইবে এবং অতি সহজে তাহাদের বিচার সমাপ্ত করিয়া বেহেশ্তে যাইবার অনুমতি দেওয়া হইবে। আর যাহারা পাপী, তাহাদের পিছনের দিক দিয়া বাম হাতে আমল নামা প্রদান করা হইবে এবং অতি কঠোর ভাবে তাহাদের হিসাব নিকাশ লইয়া দোজখে প্রেরণ করা হইবে ।
কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ নিজ আমলনামা ঊচ্চঃস্বরে পাঠ করিতে আদেশ করা হইবে । পুণ্যবান ব্যক্তিগণ অনর্গল পাঠ করিয়া যাইবে । আর পাপীগণ নিজের পাপ কাজের বর্ণণা সবার সামনে পাঠ করিতে লজ্জা অণুভব করিয়া পাঠে বিরত হওয়া মাত্র ফেরেশতাগণ তাহাদিগকে ধমকাইয়া বলিবেন যে, কেন পড়িতেছ না তখন তাহারা বলিবে যে, কোটি কোটি লোকের সম্মুখে আমাদের পাপ কাজের বর্ণনা গুলি পাঠ করিতে লজ্জা হইতেছে । ফেরেশতাগণ বলিবেন যে, দুনিয়াতে যখন পাপ কাজ করিয়াছ তখন লজ্জিত হও নাই; এখন লজ্জা করিয়া কি লাভ হইবে ? তোমাদিগকে আমলনামা পাঠ করিতেই হইবে এই বলিয়াই আগুনের চাবুক দ্বারা প্রহার করিতে থাকিলে তাহারা উপায়ন্তর না দেখিয়া আমলনামা পাঠ করিতে থাকিবে । অতএব প্রত্যেক মুসলমান স্ত্রী-পুরুষের একান্ত কর্তব্য যে তাহারা নিজ নিজ আমলনামা যাহাতে পাপশূন্য হয়, তাহার জন্য সব সময় চেষ্টা করা।