ভিন্নমতাবলম্বীদের রচিত পুস্তকসমূহ থেকে হাযির নাযির এ প্রমাণ

তাহযিরুন্নাস কিতাবের ১০ পৃষ্ঠায় দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মওলবী কাসেম সাহেব বলেন আয়াত اَلنَّبِىُّ اَوْلَى بِالْمُؤْ مِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ [নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশ্বাসী লোকদের কাছে তাদের প্রাণের চেয়ে নিকটত]এর مِنْ اَنْفُسِهِمْ অংশটুকুর শব্দ বিন্যাস ও ব্যবহৃত অন্বিত অব্যয়ের প্রতি লক্ষ্য করলে এ কথাটি প্রমাণিত হয় যে, উম্মতের সাথে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এমন নৈকট্যের সম্পর্ক আছে যে, তাদের প্রাণের সাথেও সেরূপ নৈকট্য নেই। কেননা উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত اَوْلَى শব্দটির অর্থ হচ্ছে নিকটতর। মওলবী ইসমাইল দেহলবী রচিত সিরাতে মুস্তাকীম গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠার তরজুমার চতুর্থ হিদায়েত ইশকের বর্ণনায় আগুন ও কয়লার দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা হয়েছে এভাবে, যখন খোদা অন্বেষী সাধকের পূর্ণতাপ্রাপ্ত আত্মাসত্ত্বাকে রহমানী আকর্ষণ ও ভাবাবেশের তরঙ্গমালা আহাদিয়াত এর সমুদ্র সমূহের গভীরে টেনে নিয়ে যায় তখন আনাল হক ও আমার জুবানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু নেই প্রভৃতি বাক্য  সে সাধকের মুখ থেকে নির্গত হতে থাকে। সাধকের এ অবস্থার কথাই বর্ণিত হয়েছে হাদীছে কুদসীতে যেখানে বলা হয়েছে-

كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِىْ يَسْمَعُ بِه وَبَصَرَهُ الَّذِىْ يَبْصُرُ بِه

(আমি সে প্রিয় বান্দার কান হয়ে যাই, যদ্দারা তিনি শুনেন, তার চোখ হয়ে যাই, যদ্দারা তিনি দেখেন। এ  ইবারতে একথা স্পষ্টই স্বীকৃত হয়েছে যে, মানুষ যখনিই ফানাফিল্লাহ এর স্তরে উপনীত হয় তখন সে খোদার শক্তিতেই দেখে, শুনে, ধরে ও কথা বলে। অর্থাৎ জগতের প্রত্যেক কিছুই দেখে, দূরের ও নিকটের যাবতীয় কিছু স্পর্শ করে। এটিই হচ্ছে হাযির-নাযির এর অর্থ। যখন সাধারণ মানুষ ফানাফিল্লাহ এর স্তরে গিয়ে মর্যাদার এরূপ আসনে অধিষ্ঠিত হয়, তাহলে জীন ও মানব জাতির সর্দার আলাইহিস সালাত ওয়াসাল্লাম যার ফনাফিল্লাহের স্তরে অন্য কেউ উপনীত হতে পারে না, সর্বোচ্চ  স্তরের হাযির-নাযির হবেন বৈকি।
ইমদাদুস সুলুক নামক গন্থের ১০ পৃষ্ঠায় মওলবী রশীদ আহমদ সাহেব গাঙ্গুহী লিখেছেনঃ- মুরীদের এও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে পীরের রূহ মোবারক এক জায়গায় আবদ্ধ নয়। মুরীদ দূরে বা নিকটে যেখানে হোক না কেন, এমনকি পীরের পবিত্র শরীর মোবারক থেকে দূরে হলেও পীরের রূহানিয়ত কিন্তু দূরে নয়। যখন এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেলে তখন পীরকে সর্বক্ষণ স্মরণে রাখতে হবে যাতে তার সাথে আন্তরিক সম্পর্ক প্রকট হয়ে উঠে এবং মুরীদ এ উপকারিতা লাভে ধন্য হতে থাকে। মুরীদ যে অবস্থার সম্মুখীন হয় সে অবস্থায় পীরের মুখাপেক্ষী থাকে। পীরকে আপন অন্তরে হাযির করে স্বীয় অবস্থার মাধ্যমে পীরের নিকট লক্ষ্য বস্তুর প্রার্থী হতে হবে। আল্লাহর হুকুমে পীরের রূহ মোবারক পার্থিব বিষয়টি মুরীদের অন্তরে অবশ্যই ইলকা করবেন। কিন্তু এর জন্য শর্ত হচ্ছে পীরের সাথে পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। পীরের সহিত সম্পর্কের কারণেই অন্তর বাক্যময় উঠে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের পথ উদঘাটিত হয়। আল্লাহ তাকে ইলহাম প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পন্ন করে।
এ ইবারতে নিম্ন লিখিত কথা কয়টি স্পষ্টরূপে পাচ্ছেঃ
১) মুরীদের কাছে পীরের হাযির-নাযির হওয়।
২) পীরের ধ্যানে মুরীদের রত থাকা।
৩) পীরের হাজত পূরণের ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়া
৪) খোদাকে বাদ দিয়ে মুরীদের প্রার্থিত বিষয়ে পীরের কাছে প্রার্থী হওয়া।
৫) মুরীদের অন্তরে প্রর্থিত বিষয়ে পীরের সুস্পষ্ট ধারণা সৃষ্টি করা।  ও
৬) পীর মুরীদের দিল জারী করে দেওয়া।
পীরের মধ্যে যখন এসব শক্তি নিহিত রয়েছে, তখন মানবজাতি ও ফিরিশতাদের মুর্শিদদেরও যিনি মুর্শিদ, তাঁর মধ্যে এসব গুনাবলী স্বীকার করা শিরক হয় কি করে? উল্লেখিত ইবারতটুকু ভিন্নমতাবলম্বীদের সম্পূর্ণ মতাদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। আল্লাহর শুকরিয়া যে সম্পূর্ণ তকবীয়াতুল ঈমান এখানেই খতম হয়ে গেল।
হিফযুল ঈমান নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় মওলবী আশরাফ আলী সাহেব লিখেছিনঃ
অতি অল্প সময়ে  পৃথিবী পরিভ্রমণ সম্পর্কে আবু ইয়াযিদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছেন এটি কোন পূর্ণতা জ্ঞাপক বৈশিষ্ট্য নয়। দেখুন ইবলীস পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত নিমেষেই অতিক্রম করে।
এ ইবাদতে এ কথাটুকুই স্পষ্টরূপে স্বীকার করা হয়েছে যে, কোন কোন সময় পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্তে পৌছে যাওয়া শুধুমাত্র আল্লাহওয়ালাদের জন্য সম্ভব পর নয় বরং কাফির ও শয়তানদের পক্ষে ও এরূপ দুরূহ কাজ সম্ভবপর এবং হতেই আছে। হাযির-নাযির শব্দদ্বয় দ্বারা এ কথাটুকুই বোঝানো হয়। তকবীয়াতুল ঈমান এ দৃষ্টিকোণ থেকে তা শিরক বটে।

নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁ ভূপালী ওহাবী রচিত মিসকুল খেতাম গ্রন্থের উদ্ধৃতি হাযির-নাযির এর প্রমাণেও (অত্র অধ্যায়ের ৩য় পরিচ্ছেদ) পেশ করেছি। তিনি বলেছেন- তাশাহুদে আসসালামু আলাইকা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ জন্যই সম্বোধন করা হয় যে, তিনি জগতের কনায় কনায় বিদ্যমান। নামাযীর সত্ত্বার মাঝে হাযির ও বিরাজমান।
উপরোল্লিখিত ইবারতসমূহ থেকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি সুচারুরূপে প্রতিপন্ন হল।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply