ইবাদতসমূহ শরীয়তের আলোকে তিন প্রকারঃ-
১. ইবাদতে মালী যেমন যাকাত, সাদক্বা, ফিতরা ইত্যাদি। এগুলো আদায় করার জন্য প্রয়োজন হোক কিংবা না-ই হোক প্রতিনিধি নিযুক্ত করা যায়।
২. ইবাদতে বদনী বা শারীরিক ইবাদত। যেমনঃ- নামায, রোযা এসব ইবাদত অন্য কারো দ্বারা সম্পন্ন করার নিয়ম নেই।
৩. ইবাদতে মালী ও বদনীর সমন্বয়ে যেমন হজ্জ। এটা প্রতিনিধি দ্বারা তখনিই কেবল সম্পন্ন করানো যায় যখন কারো উপর হজ্জ ফরয হয়; কিন্তু সে হজ্জ আদায় করতে সামর্থ হয় না। যেমন- এক ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয হলো এবং সে হজ্জ আদায় করার সময়ও পেলো কিন্তু সে তখন আদায় করেনি। পরে বিভিন্ন কারণে আদায় করার সামর্থ হারিয়ে ফেললো। যেমন- মৃত্যুবরণ করলো বা কোন কারণে বন্দী হয়ে পড়লো কিংবা এমন রোগে আক্রান্ত হলো যা আ-মৃত্যু আরোগ্য হবার নয় যেমন- অর্দ্ধাঙ্গ রোগে আক্রান্ত অন্ধ কিংবা খোড়া হয়ে গেলো। অথবা এত বেশী বৃদ্ধ হয়ে গেলো যে যানবাহনে আরোহণ করতে অক্ষম হয়ে পড়লো। মহিলার জন্য মুহরিম না থাকা যাতায়াতের পথ নিরাপদ না থাকা ইত্যাদি অবস্থায় অন্য কারো দ্বারা হজ্জ করাবে অথবা ওসীয়ত করে যাবে। নফল হজ্জ এবং নফল ওমরার বেলায় যে কোন অবস্থাতেই সামর্থ্য থাকুক বা না থাকুক প্রতিনিধি দ্বারা আদায় করানো যায়। এর জন্য প্রতিনিধি মুসলমান হওয়া, বালেগ হওয়া এবং বিবেক সম্পন্ন হওয়া যথেষ্ট কিন্তু ফরয হজ্জের প্রতিনিধিত্বের জন্য কিছু বাড়তি শর্ত রয়েছে যা নিম্নরূপ-
১. যার পক্ষে হজ্জ করবে তাঁর উপর হজ্জ ফরয হওয়া।
২. হজ্জ ফরয হওয়ার পর আদায়ে সামর্থ্যহীন হয়ে পড়া।
৩. এর অক্ষমতা আ-মৃত্যু বহাল থাকা।
৪. অন্য জনকে হজ্জ আদায় করার জন্য নিজে নির্দেশ প্রদান করা; তাঁর অবর্তমানে ওয়ারিশ নির্দেশ দেয়া।
৫. হজ্জের যাবতীয় খরচ নিয়্যতকারীর পক্ষ থেকে হওয়া।
৬.নিয়োগকারীর নামে (পক্ষ) ইহরাম বাধা।
৭. কেবল একজন ব্যক্তির পক্ষে ইহরাম বাঁধা।
৮. কেবল একটি হজ্জের ইহরাম বাঁধা।
৯. নিয়োগকৃত ব্যক্তি নিজেই হজ্ব সম্পাদন করা। (অবশ্য এটা উত্তম।)
১০.নিয়োগকৃত ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট হওয়া।
১১. সম্ভাব্য ক্ষেত্রে নিয়োগকারীর এলাকা থেকেই হজ্জে রওয়ানা হওয়া।
১২. যানবাহনে করে হজ্জে যাওয়া অর্থাৎ টাকা বাঁচানোর মানসে পদব্রজে না যাওয়া।
১৩. হজ্জ বা ওমরা যার জন্য নির্দেশ করবে সেটাই পালন করা।
১৪. নিয়োগকারীর ইচ্ছা মাফিক ইফরাদ তামাত্তো কিংবা ক্বিরান যেটার জন্য নিয়োগ করবে সেটাই পালন করা।
১৫. নিয়োগকারীর মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধা।
১৬. হজ্জে বদল সম্পন্নকারী কোন কাজ দ্বারা হজ্জ নষ্ট না করা। অন্যথায় নিজ খরচে তাকেই তাঁর ক্বাযা দিতে হবে।
১৭. দায়িত্ব নেওয়ার পর হজ্জ যথারীতি আদায় করা অর্থাৎ কোন কারণে হজ্জ বাদ না দেয়া।
১৮. নিয়োগদাতা ও নিয়োগকৃত উভয়ে মুসলমান হওয়া।
১৯. উভয়ে বিবেকবান হওয়া এবং
২০. নিয়োগকৃত ব্যক্তি হজ্জের মাসআলা সম্পর্কে জ্ঞাত ও ওয়াকিবহাল হওয়া।
যে ব্যক্তি এখনো নিজে হজ্জ আদায় করেনি সে অন্যের পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করলে আদায় হবে কিন্তু মাকরূহ হবে। তাই সতর্কতা স্বরূপ এ ধরনের লোক দ্বারা হজ্জে বদল না করানোই উচিত।
এমন ব্যক্তি দ্বারা হজ্জ করানো উত্তম, যিনি নিজে হজ্জ আদায় করেছেন, স্বয়ং আলিমে বা আমল এবং হজ্জের মাসায়েল সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখেন।
Posted inহজ্ব / ওমরাহ